🌺|| চৌধুরী বাড়ির বনেদি দুর্গা পূজা ||🌺

আজকে পুরাতন বনেদি/ জমিদার বাড়ির কথা বলছি।

এটি অবস্থিত উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতর ভেলাই গ্রাম। এই গ্রামটি কালিয়াগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার কাছে অবস্থিত। এই এলাকাটি পাঁচ থেকে সাতটি পাড়া নিয়ে গঠিত। মূলত চৌধুরী পাড়াটি অনেক দিক থেকে এলাকার মানুষের কাছে অনেক পরিচিত। এই গ্রামের যে প্রধান জমিদার ছিলেন মধুসূদন চৌধুরী, তাঁর আদি বসতি ছিল বর্ধমান জেলায়। তিনি সেখান থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং সেই থেকে এই পাড়াটি চৌধুরী পাড়া নামে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। 

এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শ্রীমতী নদী, যেটি বর্তমানে প্রায় নিমজ্জিত অবস্থায়। সেই সময়ে তিনি দুটি মন্দির স্থাপন করেন। একটি লক্ষ্মী নারায়নের মন্দির ও আরেকটি মা দুর্গার মন্দির। 

আমরা আলোচনা করব মূলত এই দুর্গা মন্দির কে নিয়েই। আজ থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২১০ আগে জমিদার মধুসূদন চৌধুরীর আমল থেকে এই অঞ্চলে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। সে সময় ভেলাই গ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাত্র একটি পুজো হতো, যার মূল আয়োজক ও উদ্যোক্তা ছিলেন জমিদার মধুসূদন চৌধুরী। বর্তমানে এই জমিদার বাড়ির বংশধরেরা সকলে মিলে একত্রিত হয়ে পুজো করে থাকেন। 

নিয়ম নিষ্ঠা মেনে আজও এই মন্দিরে মা দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন। পূজা চলাকালীন পাঁচ দিন ধরে বাড়ির সকল সদস্য নিরামিষ অন্ন আহার করে থাকেন। সন্ধ্যেবেলা আরতি হয় এবং বর্তমানে কিছু সদস্যদের উদ্যোগে এই মন্দির চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। 

পুজোর কয়েকদিন পরিবারের সকল সদস্যরা খুব আনন্দ উৎসব করেন। পরিবারের অনেক সদস্য যারা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তারাও পুজোর কয়েকদিন আনন্দে শামিল হন। আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ পুজো দেখতে আসেন, অষ্টমীর দিন অঞ্জলী দেন এবং নবমীর দিন সকলকে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয়। 

এখানে দশমীর দিনে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় না, দশমীর পরে কোনো একসময় একটি ভালো দীনক্ষণ দেখে পাশে বয়ে চলা শ্রীমতি নদীতে মা কে বিসর্জন দেওয়া হয়।

এখনও দুটি মন্দির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বর্তমানে এই মন্দির দুটি জড়াজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় দশায় পরিণত হয়েছে। তাই সরকার বা প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো সাহায্য পেলে মন্দিরের জৌলুস ফিরে আসবে, এক্ষেত্রে আমি  সেখানকার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।